ওয়াজের ময়দানে ওয়াজ নেই
মাওলানা আমিনুল ইসলাম কাসেমী
বড় আফসোসের সাথে লিখতে হচ্ছে। বড় দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আমাদের। ওয়াজ মাহফিলের মত একটা পবিত্র অঙ্গন কলুষিত করে ফেলা হয়েছে। এখন আর ওখানে ওয়াজ নেই। আছে শুধু গালিগালাজ- হম্বি- তম্বি- অন্যের কাপড় খুলে দেওয়া। এক বক্তা আরেক বক্তার কাপড় ধরে টানছেন।
গতবছর দেখেছিলাম, জুতা প্রদশর্নি, এবার দেখতেছি, কাপড় ধরে টানাটানি। একজন আরেকজনের নামে বিষোদগার।
আচ্ছা, একটা ওয়ায়েজীনদের সংগঠন হল, খুব ভাল লেগেছিল সংগঠন দেখে, কিন্তু এখন দেখতেছি, ঐ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আরেকজনের বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে লেগে গেছেন। সরাসরি মঞ্চে বসে আরেক আলেমের কাপড় উঁচু করে ধরছেন।
আছতাগফিরুল্লাহ, আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। এই সব কি শুরু হল। আলেমদের এমন চরিত্র! তার মুখ থেকে এমন কথা বলতে লজ্জা হল না?
আমাদের ওয়ায়েজ ভাইদের যে সংগঠন আছে, ওনারা কি করছেন বুঝে আসেনা। এগুলো কি আপনাদের সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য? আরেক আলেমকে অপমান-অপদস্ত করার জন্য কি আপনারা সংগঠন তৈরী করেছেন? সত্যি যদি আপনাদের এমন উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে আর কথা নেই। যা ইচ্ছা তাই করুন। আর যদি আপনাদের উদ্দেশ্য মহৎ হয়, তাহলে ওনাকে দল থেকে বহিস্কার করুন। তাহলে বোঝা যাবে আপনারা ভাল চাচ্ছেন এ জাতির।
ওয়াজের ময়দানে ওয়াজ আর নেই। কমেডিয়ান বক্তায় ভরে গেছে। মঞ্চে বসে নাটক করেন। এর আগে বহু নাটক দেখেছি ওনাদের। এক সময় তিনি এক রুপ ধারণ করেন। এর আগে ওনাকে দেখেছি, সেই দেশ সেরা বক্তা এর পক্ষে কথা বলতে। আবার হঠাৎ করে দেখি, তিনি সেই ওয়ায়েজীনদের দলে যোগ দিয়ে লাগামহীন হয়ে গেছে।
বুঝে আসেনা, ওয়ায়েজীনদের সংগঠনে যে যায়, তার আর ব্রেক থাকেনা। লাগামহীন হয়ে যায়। ব্যাপারটা কি? এত দিন যে লোকটা একজনের প্রসংসা করে আসল, আজ দেখছি, সে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুংকার দিচ্ছে। ওয়ায়েজীনদের সংগঠনে কি মধু আছে? নাকি ওখানে গেলে কারো আর হুঁশ থাকেনা। এটা কিন্তু চিন্তার বিষয়।
নাটক-গান -সিনেমার ডায়লগ যারা মুখস্ত করে ওয়াজ করে বেড়ায়, ওদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বহুবার আমি লিখেছি। কিন্তু কাজ হয় না। শেষমেষ কিন্তু ঐ নাটকের হুজুরগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠল। ওদের তো লজ্জা-শরম নেই জানতাম। কিন্তু আবার সেই বেহায়াপনার ওয়াজ করেই বসল।
যারা ওয়াজ মাহফিলকে খিস্তি-খেউড় আর হাস্যরসের মঞ্চ বানিয়ে ফেলেছে, তাদের কাছে তো এখন আরেকজন আলেমকে নাঙা করা সাধারণ বিষয়। ওরা যদি পুর্বের থেকে ভাল হয়ে চলত, তাহলে এরপ করার সাহস পেতনা।
কিছু বক্তা হম্বি-তম্বি করেন খামাখা। কোন প্রয়োজনে লাফালাফি করেন। একদম বেহুদা লাফালাফিতে বরং ওয়াজের মাহফিল গুলো প্রশ্ন বিদ্ধ হয়ে ওঠছে।
এজন্য ওয়ায়েজীন ভাইদের প্রতি অনুরোধ। আল্লাহর ওয়াস্তে নিজেদের আপোসে ঝগড়া বন্ধ করুন। মানুষকে ওয়াজ করার আগে নিজে ভাল হয়ে যান।
কিছুদিন আগে এক বুজুর্গের একটা ওয়াজ শুনলাম।খুব ভাল লাগল। সম্ভবত তিনি “পীর সাহেব দেওয়ানা”। তিনি ওয়ায়েজীনদের নসীহত করতেছেন, ওয়ায়েজীনদের প্রথমে ইসলাহ হতে হবে। নিজে ইসলাহ বা সংশোধন না হলে, সেটা কিন্তু স্রোতাদের মধ্যে প্রভাব পড়েনা। কোন ফায়দা হয়না জাতির।
ঠিক যারা ময়দানে গালিগালাজ করছেন, তারা একটু চিন্তা করুন তো? আপনাদের ব্যক্তিগত অবস্থা কেমন? আপনি কি ইসলাহ হয়েছেন? আপনি নিজে যদি সংশোধন না হন, তাহলে কিভাবে ওয়াজের ষ্টেজে আসেন?
আমি সবাইকে বলছি, ভাই-বন্ধু, নিজে সংশধোন হোন। নিজের আমল-আখলাক সহী করুন। আশা করি জাতির মঙ্গল বয়ে আনবে। আর নিজে যদি সংশোধন না হোন, তাহলে এই জাতির কোন উপকারে আসবেনা।
ওয়াজ মাহফিলে যে ফযীলত রয়েছে, সেটা জারি রাখুন। একজন বক্তার বিরুদ্ধে গালিগালাজ করে ওয়াজের ফযীলত নষ্ট করবেন না।
দেখুন! কোটি কোটি মানুষ তাকিয়ে থাকে আলেমদের দিকে। তারা আলেমদের ফলো করে। আলেমদের রাহবার হিসেবে মানে। কিন্তু ভাই সকল আপনার মুখে ভাষা যদি খারাপ হয়, তাহলে সেই কোটি কোটি মানুষ গুলো নিরাশ হয়ে পড়ে। তাদের যাওয়ার কোন রাস্তা থাকেনা।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সহী বুঝ দান করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট